আসুন পরিচিত হই: আমি শাহরিয়ার ইবনে আলম এবং এই ব্লগে এটি আমার প্রথম পোস্ট।


হ্যালো পাঠকবৃন্দ,

আশা করি সবাই ভালোই আছেন। আমিও আল্লাহর রহমতে বেশ ভালোই আছি। এই ব্লগে (blog.shahriaribnealam.com) এটি আমার প্রথম পোস্ট, তাই আপনাদের সাথে পরিচিত হতে আসলাম।আমি শাহরিয়ার ইবনে আলম, একজন বাংলাদেশী কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলোজি ইঞ্জিনিয়ার, উদ্যোক্তা, ডিজিটাল ক্রিয়েটর, লেখক এবং শিক্ষক। আমি দীর্ঘ ৭ বছর যাবত ওয়েব ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, ডিজিটাল মার্কেটিং, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (এসইও), অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট,  সাইবার সিকিউরিটি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমাত্রা (এআই) নিয়ে কাজ করছি এবং বর্তমানে আমি একটি আইটি কম্পানি এবং বেশ কিছু ওয়েবসাইট পরিচালনা করছি। পাশাপাশি টুকটাক ফ্রিল্যান্সিংও করে থাকি।

ছোটোবেলা থেকেই আমার তথ্য ও প্রযুক্তির উপরে অনেক ঝোঁক ছিলো এবং আমার মনে পড়ে আমি যখন ক্লাস টু বা থ্রি তে পড়ি, তখন থেকেই আমার বাসায় আমার নিজস্ব একটি কম্পিউটারও ছিলো এবং সে সময়ে আমার কম্পিউটারের মনিটর ছিলো সিআরটি টাইপের এবং প্রসেসর ছিলো ইন্টেল পেন্টিয়াম সিরিজের। এর হার্ড ডিস্ক ছিলো মাত্র ৬৪ জিবি এবং এতে ফ্লপি ডিস্ক ও ডিভিডি রমও ছিলো। তখন থেকেই কম্পিউটার ঘাটাঘাটি করে কম্পিউটার রিলেটেড নতুন নতুন অনেক সমস্যার সমাধান করতাম। আরও একটি মজার ব্যাপার হলো, ছোটোবেলায় এলাকার মুরব্বিদের কারো মোবাইলে সমস্যা হলেই চলে আসতো আমার কাছে। সে সময়টা এমন ছিলো যে, কারো মোবাইল ফোন সাইলেন্ট মুড থেকে জেনারেল মুডে নিয়ে দিলেই পুরো এলাকায় আমার নামে সুনাম ছড়িয়ে যেতো এবং আমার নামের আগে ইঞ্জিনিয়িার পদবী বসে যেতো আরকি!

বাড়িতে কম্পিউটার এবং তথ্য ও প্রযুক্তির উপরে আমার প্রবল আকর্ষণ থাকার কারণে ছোটোবেলা থেকেই আমার ইচ্ছা ছিলো আমি একজন ইঞ্জিনিয়ার হবো। তখন যদি কেউ জিজ্ঞেস করতো আমি বড় হয়ে কি হবো? তখন সোজা-সাপ্টা উত্তর দিয়ে দিতাম, “আমি বড় হয়ে ইঞ্জিনিয়ার হবো।”

এরপর এভাবেই চলতে থাকলো। এরপর মনে পড়ে যখন ক্লাস ফোর-ফাইভে পড়ি, তখন আমার মায়ের বাটন মোবাইল দিয়ে ইন্টারনেট চালাতাম। সে সময়ে অপেরা মিনি এবং জাভা সাপোর্টেড মোবাইল ফোন খুবই জনপ্রিয় ছিলো। তবে আমার গেম-টেমের প্রতি তেমন কোনো আকর্ষণ ছিলো না। অপেরা মিনি দিয়ে মোবাইল ও কম্পিউটার রিলেটেড তখন আনেক কিছু সার্চ করতাম গুগলে এবং সে সময়ে ইংরেজি ব্লগের পাশাপাশি বাংলা ব্লগগুলোও অনেক জনপ্রিয় ছিলো। অনেক বড় বড় নাম করা ব্লগাররা ব্লগে লেখালেখি করতেন। গুগলে মোবাইল ও কম্পিউটার রিলেটেড কোনো প্রশ্ন বা সমস্যার সমাধান খুঁজতে গেলে বেশিরভাগই ব্লগ পোস্ট গুলো সামনে আসতো। তখন থেকে অনলাইনে তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন ব্লগ পোস্ট পড়ার প্রতি আরও একটা নেশা তৈরী হয়ে গেলো।

এরপর একটা সময় গিয়ে ভাবতে লাগলাম এই ব্লগ বা ওয়েবসাইট গুলো কিভাবে তৈরী করে? এরপর  কিভাবে ব্লগ বা ওয়েবসাইট তৈরী করতে হয় এসব বিষয় নিয়ে গুগলে সার্চ করা শুরু করলাম। এরপর জানতে পারলাম ব্লগ বা ওয়েবসাইট তৈরী করতে হলে ওয়েব ডিজাইনার বা ওয়েব ডেভেলপার হতে হবে। এইচটিএমএল, সিএসএস, জাভাস্ক্রিপ্ট সহ আরো অনেক ল্যাংগুয়েজ এবং সহজেই ব্লগ বা ওয়েবসাইট তৈরী করতে হলে ওয়াপকা, মাইওয়াপ ব্লগ, ব্লগার-ব্লগস্পট অথবা ওয়ার্ডপ্রেস শিখতে হবে। আমিও নাছোড়বান্দা, শিখবো মানে শিখবোই। গুগলে সার্চ করে করে বিভিন্ন  ব্লগ ও ওয়েবসাইট থেকে এইচটিএমএল, সিএসএস, জাভাস্ক্রিপ্ট, ওয়াপকা, মাইওয়াপ ব্লগ, ব্লগার-ব্লগস্পট ও ওয়ার্ডপ্রেস একটার পরে একটা শিখতে লাগলাম এবং মনে পড়ে সেই ২০১৪-১৫ সালের দিকে আমি মানুষকে ওয়েবসাইট বানিয়ে দিয়ে টুকটাক টাকাও ইনকাম করতাম, যাকে ফ্রিল্যান্সিং বলে।

এরপর আমিও নিজের গোল ঠিক করলাম যে, আমি একজন ইঞ্জনিয়ার তো হবোই, পাশাপাশি একজন প্রফেশনাল ওয়েব ডিজাইনার অ্যান্ড ডেভেলপারও হবো এবং এই লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার জন্য নিজের স্কিলস গুলোকে ডেভেলপ করতে লাগলাম। এবং সে সময়ে নতুন নতুন থ্রি-জি ইন্টারনেট সেবা আসার ফলে আমার জন্য আরো সহজ হয়ে যায় নিজের স্কিলস গুলোকে ডেভেলপ করার জন্য। কারণ, তখন আমার এলাকায় ব্রডব্যান্ড/ওয়াইফাই ইন্টারনেট ছিলো না, তার জন্য আমি তখন থ্রি-জি মডেম কিনি। যার ফলে কম্পিউটারে ইন্টারনেট চালাতে সুবিধা হতো, মোটামুটি ভালোই স্পিড পাওয়া যেতো এবং ইউটিউবে আনেক ভিডিও রিসোর্স ছিলো যা আমার জন্য অনেক হেল্পফুল হয়েছিলো।

তারপর এভাবেই টুকটাক ফ্রিল্যান্সিং এবং নিজের স্কিলস ডেভেলপমেন্ট এর কাজ চলতে থাকলো। অন্য দিক দিয়ে আমারও এসএসসি পরীক্ষার সময় ঘনিয়ে আসলো। মজার কথা আর কি বলবো! আমার সকালে এসএসসি পরীক্ষা, অথচ আমি সকাল বেলা বই খুলে বইয়ের নিচে আমার মায়ের সেই বাটন মোবাইলটি রেখে লুকিয়ে লুকিয়ে টিপতেছি এবং কোডিং করতেছি। হুট করে আমার বাবা এসে দেখেন যে আমি বইয়ের নিচে মোবাইল রেখে লুকিয়ে লুকিয়ে টিপতেছি, তিনি একটা আছাড় দিয়ে সেই মোবাইলটা ভেঙে ফেলেছিলেন। যেহেতু আমার ব্যাকাপ হিসেবে কম্পিউটার ছিলো, তাই আর ততটা খারাপ লাগেনি।

এরপর এসএসসি পরীক্ষা শেষ হলো এবং আলহামদুলিল্লাহ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে বেশ ভালো মার্ক পেয়েই এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলাম। এরপর মহান আল্লাহ তায়ালা আমার স্বপ্ন পূরণের দরজা খুলে দিলেন। এসএসসির পরে চান্স পেলাম একটি সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে, ডিপ্লোমা ইন কম্পিউটার সাইন্স  অ্যান্ড টেকনোলোজি ইঞ্জনিয়ারিং (সিএসটি) -এ। যেটা ছিলো আমার ছোটোবেলার ড্রিম। ডিপ্লোমা পড়াড় পাশাপশি পুরো দমে আমি ফ্রিল্যান্সিং করতে লাগলাম  এবং দেশ-বিদেশের অনেক বড় বড় ক্লায়েন্টের কাজ করতে লাগলাম। কাজ করতে করতে একটা সময় দেখলাম, শুধু  ওয়েব ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট দিয়ে তেমন কিছু হবে না। আমাকে মার্কেটপ্লেসে টিকে থাকতে হলে আরো অনেক কিছু শিখতে হবে। এরপর শেখা শুরু করলাম ডিজিটাল মার্কেটিং, এসইও, অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট ও সাইবার সিকিউরিটি ইত্যাদি। যেহেতু  আমি এখন কম্পিউটার সাইন্স  অ্যান্ড টেকনোলোজি ইঞ্জনিয়ারিং এর স্টুডেন্ট, তাই এগুলো আমি খুব সহজেই শিখে ফেললাম এবং দেশ-বিদেশের বিভিন্ন  ক্লায়েন্টদেরকে এই সকল সার্ভিসগুলো  প্রোভাইড করতে লাগলাম। তো আলহামদুলিল্লাহ, চার বছর ধরে ডিপ্লোমা ইন কম্পিউটার সাইন্স  অ্যান্ড টেকনোলোজি ইঞ্জনিয়ারিং (সিএসটি) -এ পড়াড় ফলে তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক অনেক কিছু শিখেছি ও জেনেছি, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: প্রোগামিং, নেটওয়াকিং,  হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, পিসিবি ডিজাইন, ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং ফান্ডামেন্টালস, অ্যাকাউন্টিং এবং বিজ্ঞান বিষয়ক আরও অনেক কিছু যেমন: ফিজিক্স, কেমেস্ট্রি, ম্যাথমেটিক্স ইত্যাদি যা আমার ক্যারিয়ারকে আরো সামনে  এগিয়ে নিতে সাহায্য করেছে। এরপর বেশ ভালো নাম্বার পেয়ে ডিপ্লোমা ইন কম্পিউটার সাইন্স  অ্যান্ড টেকনোলোজি ইঞ্জনিয়ারিং (সিএসটি) -এ পড়া শেষ করি।

তারপর স্নাতক করার জন্য ভর্তি হই একটি স্বনামধন্য বেসরকারি ইউনিভার্সিটি-তে, বিএসসি ইন কম্পিউটার সাইন্স  অ্যান্ড ইঞ্জনিয়ারিং (সিএসই) -তে। যা আমার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন পূরণে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যায় এবং এখানে আমি আরও গভীরভাবে তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক অনেক কিছু শিখেছি ও জেনেছি। এরই মধ্যে ফ্রিল্যান্সিং তো করছিই, পাশাপাশি ঢাকাতে একটি অফিস দিলাম এবং নিজের একটি আইটি কম্পানি খুলে ফেললাম। পাশাপাশি কৃত্রিম বুদ্ধিমাত্রা (এআই) নিয়েও শিখতে লাগলাম। আমি ইচ্ছে করেই সরকারি ইউনিভার্সিটি-তে চান্স দেইনি, কারণ সরকারি ইউনিভার্সিটি গুলোতে রেগুলার ক্লাস করতে হবে এবং কোনো ইাভিনিং শিফট নেই। আবার ঠিকমতো ক্লাস না করলে সিজিপিএ কমে যাবে, ফলে রেজাল্টও খারাপ হবে।  আমি শুধু পড়াশোনার মধ্যেই আটকে থাকতে চাইনি, বরং পড়াশোনার পাশাপাশি যাতে নিজে কিছু করতে পারি এবং আমার ক্যারিয়ারকে ভালোভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি, সেজন্য বেসরকারি ইউনিভার্সিটি-তে ইচ্ছে করেই ভর্তি  হয়েছিলাম, যাতে আমি পর্যাপ্ত সময় পাই। এবং এখানেও বেশ ভালো মার্ক পেয়ে স্নাতক শেষ করি।

এরপর মাস্টার্স  করার জন্য ভর্তি হই একটি স্বনামধন্য বেসরকারি ইউনিভার্সিটি-তে, এমএসসি ইন কম্পিউটার সাইন্স  অ্যান্ড ইঞ্জনিয়ারিং (সিএসই) -তে। বর্তমানে এটি কন্টিনিউ করছি এবং খুব দ্রুতই মাস্টার্স শেষ হয়ে যাবে, ইংশাআল্লাহ।

এতক্ষণ আমি আমার নিজের সম্পর্কে এত বকবক করলাম তার কারণ হচ্ছে - আমার গত ৭-১০ বছরের ক্যারিয়ারে আমি যা যা শিখেছি, যেসব সমস্যার সম্মুখ্খীন হয়েছি এবং কিভাবে  আজকে একজন পরিচিত মুখ হয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি, তার সব কিছুই একের পর এক আলোচনা করতে চাই আমার ব্লগে, ফেসবুক পেজে এবং ইউটিউব চ্যানেলে। যাতে আমার পোস্ট অথবা ভিডিওগুলো দেখে নতুনরা শিক্ষা অর্জন করতে পারে। বিশেষ করে যারা ফ্রিল্যান্সিং-আউটসোর্সিং, ওয়েব ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, ডিজিটাল মার্কেটিং, এসইও, অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট, কৃত্রিম বুদ্ধিমাত্রা (এআই) ও সাইবার সিকিউরিটি এসব বিষয়ে স্কিলস ডেভেলপমেন্ট করে নিজের ক্যারিয়ারকে সাজাতে চান, তাদের জন্য আমার পোস্ট/ভিডিওগুলো অনেক হেল্পফুল হবে এবং অনেক কিছু শিখতে পারবেন।

আপনারা চাইলে বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়াতে আমার সাথে যুক্ত হতে পরেন। আমার সকল সোস্যাল মিডিয়ার লিংকগুলো আমার পোর্টফোলিও https://www.shahriaribnealam.com ওয়েবসাইটে দেওয়া আছে।

তাহলে আজকে এ পর্যন্তই। পরবর্তীতে আবার নতুন কোন তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক পোস্ট/ভিডিও নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হবো। ততক্ষণ সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন এবং কোনো ভুল-ত্রুটি থাকলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আল্লাহ হাফেজ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ