হ্যালো পাঠকবৃন্দ,
আশা করি সবাই ভালোই আছেন। আমিও আল্লাহর রহমতে বেশ ভালোই আছি। আমি শাহরিয়ার ইবনে আলম এবং আজকে আমি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি পোস্ট নিয়ে হাজির হয়েছি, যা বর্তমান সময়ের ব্লগার ও কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের জন্য অনেক হেল্পফুল হবে।
ফাইল হোস্টিং ও ফাইল শেয়ারিং কি?
ফাইল হোস্টিং হচ্ছে এমন একটি সেবা, যেখানে আপনি আপনার যেকোনো ফাইল (যেমন: ডুকুমেন্ট, ছবি, ভিডিও, সফটওয়্যার, গেমস, টেমপ্লেট, থিম, প্লাগিন ইত্যাদি) তৃতীয় পক্ষের ওয়েবসাইটে অর্থাৎ যারা ফাইল হোস্টিং সেবা প্রদান করে থাকে তাদের ওয়েবসাইটে বা ক্লাউড সার্ভারে আপলোড করে রাখতে পারবেন এবং তা প্রয়োজনে আপনি যখন খুশি তখন ডাউনলোড করে নিতে পারবেন অথবা আপনার ব্লগ / ওয়েবসাইট / ইউটিউব চ্যানেল / ফেসবুক / ই-মেইল অথবা অন্যান্য মাধ্যমে সেই ফাইলের ডাউনলোড লিংক শেয়ার করতে পারবেন যাতে অন্যরা আপনার আপলোড করে রাখা ফাইলটি ডাউনলোড করতে পারে। একে ভিন্ন নামেও ডাকা হয়ে থাকে, যেমন: ক্লাউড স্টোরেজ, অনলাইন ব্যাকাপ স্টোরেজ ইত্যাদি।
আমার পছন্দের সেরা ৫টি ফ্রি ফাইল হোস্টিং ও ফাইল শেয়ারিং সার্ভিস ওয়েবসাইট
১. মিডিয়াফায়ার (MediaFire): আমার পছন্দের লিস্টের প্রথমেই যে ফাইল হোস্টিং সেবা প্রদানকারী ওয়েবসাইটটি আছে সেটি হলো “মিডিয়াফায়ার”। একে আদর করে অনেকে “মিডিয়া আগুন” বলে ডেকে থাকে। মিডিয়াফায়ার ১০ গিগাবাইট পর্যন্ত ফ্রি স্টোরেজ দিয়ে থাকে। আপনার যদি আরও বেশি স্টোরেজ এর দরকার হয় তাহলে তাদের প্রিমিয়াম প্লানে আপগ্রেড করে নিতে পরেন। এটি আমি আমার পছন্দের লিস্টের একদম প্রথমেই রেখেছি তার কারণ হলো এটিতে ফাইল ডাউনলোড করার সময় অতিরিক্ত কোনো বিজ্ঞাপন শো করে না এবং এর ডাউনলোড স্পিডও অন্যদের তুলনায় অনেক ভালো। যার কারণে ইউজাররা খুব সহজেই ফাইল ডাউনলোড করতে পারে, একদম প্রফেশনালদের মতো। এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটার ফাইল এক্সপায়ার হয় না। অর্থাৎ আপনি কোনো ফাইল আপলোড করে রাখলে তা যদি কখোনো ডাউনলোড করা না হয়, তাহলেও সেই ফাইলগুলো ডিলিট হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে আপনার মিডিয়াফায়ার একাউন্টটি সচল রাখতে হলে প্রতি ৩০ দিনে মিনিমাম একবার হলেও আপনার মিডিয়াফায়ার একাউন্টে লগিন করবেন। তা না হলে, আপনার একাউন্টটি ক্লোজ হয়ে যেতে পারে (যদিও হয় না)। এছাড়াও এর মোবাইল অ্যাপ রয়েছে, যার ফলে মোবাইল দিয়ে খুব সহজেই আপনার ফাইলগুলো আপলোড, শেয়ার ও ম্যানেজ করতে পারবেন। বিনামূল্যে মিডিয়াফায়ার থেকে ১০ গিগাবাইট স্টোরেজ পেতে এই লিংক https://www.mediafire.com/?9nxr52e থেকে সাইন আপ করুন।
২. মেগা (Mega): আমার পছন্দের লিস্টের দ্বিতীয় স্থানে যে ফাইল হোস্টিং সেবা প্রদানকারী ওয়েবসাইটটি আছে সেটি হলো “মেগা”। মেগা মূলত সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় পেয়েছে তাদের এনক্রিপশন, প্রাইভেসি ও সিকিউরিটির জন্য। মেগা ২০ গিগাবাইট পর্যন্ত ফ্রি স্টোরেজ দিয়ে থাকে, তবে এর ফাইল ট্রান্সফার বা ডাউনলোড এর ব্যান্ডউইথ লিমিটেড। আপনার যদি আরও বেশি স্টোরেজ এর দরকার হয় তাহলে তাদের প্রিমিয়াম প্লানে আপগ্রেড করে নিতে পরেন। এটি আমি আমার পছন্দের লিস্টের দ্বিতীয়তে রেখেছি তার কারণ হলো এটিতে ফাইল ডাউনলোড করার সময় কোনো বিজ্ঞাপনই শো করে না এবং এর ডাউনলোড স্পিডও অনেক ভালো। যার কারণে ইউজাররা খুব সহজেই ফাইল ডাউনলোড করতে পারে, একদম প্রফেশনালদের মতো। এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটার ফাইল এক্সপায়ার হয় না। অর্থাৎ আপনি কোনো ফাইল আপলোড করে রাখলে তা যদি কখোনো ডাউনলোড করা না হয়, তাহলেও সেই ফাইলগুলো ডিলিট হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে আপনার মেগা একাউন্টটি সচল রাখতে হলে প্রতি 90 দিনে মিনিমাম একবার হলেও আপনার মেগা একাউন্টে লগিন করবেন। তা না হলে, আপনার একাউন্টটি ক্লোজ হয়ে যাবে। এছাড়াও এর মোবাইল অ্যাপ রয়েছে, যার ফলে মোবাইল দিয়ে খুব সহজেই আপনার ফাইলগুলো আপলোড, শেয়ার ও ম্যানেজ করতে পারবেন। আর একটা কথা না বললেই নয়, যেহেতু মেগা হাই সিকিউরিটি বা এনক্রিপশন প্রোভাইড করে থাকে, তাই মেগাতে ফাইল আপলোড বা ডাইনলোড করার সময় কিছুটা বাড়তি সময় লাগে এবং ভালো মানের মোবাইল / কম্পিউটার ও আপডেটেড ব্রাউজার ছাড়া মেগা অনেক সময় কাজ করে না। বিনামূল্যে মেগা থেকে ২০ গিগাবাইট স্টোরেজ পেতে এই লিংক https://mega.nz/register থেকে সাইন আপ করুন।
৩. টেরা বক্স (TeraBox): আমার পছন্দের লিস্টের তৃতীয় স্থানে যে ফাইল হোস্টিং সেবা প্রদানকারী ওয়েবসাইটটি আছে সেটি হলো “টেরা বক্স”। টেরাবক্স মূলত জনপ্রিয়তা পেয়েছে বিনামূল্যে ১ টেরাবাইট বা ১০২৪ গিগাবাইট পর্যন্ত ফ্রি স্টোরেজ প্রোভাইড করার কারণে, যা অন্য সব ফাইল হোস্টিং সেবা প্রদানকারী ওয়েবসাইটের ধারের কাছেও না। যেখানে বড় বড় ফাইল হোস্টিং সেবা প্রদানকারী ওয়েবসাইট ১০ জিবি / ২০ জিবি স্টোরেজ প্রোভাইড করে থাকে, সেখানে টেরাবক্স বিনামূল্যে ১ টেরাবাইট বা ১০২৪ গিগাবাইট পর্যন্ত ফ্রি স্টোরেজ প্রোভাইড করে থাকে! তাইলে অনেকেই হয়তো বলবেন যে এটাকে কেনো আমার পছন্দের লিস্টের প্রথমে রাখিনি? তার আসল কারণ হলো, টেরাবক্স থেকে কোনো ফাইল ডাউনলোড করতে থেকে ডাউনলোড স্পিড তুলনামূলকভাবে খুবই কম পাওয়া যায় এবং প্রচুর বিজ্ঞাপন শো করে, যা অনেকের কাছে বিরক্তির কারণ। এজন্যই টেরাবক্স-কে আমার পছন্দের লিস্টের তৃতীয় স্থানে রেখেছি। তবে যাদের সাথে ডাউনলোড স্পিড মেটার করে না এবং যারা বেশি স্টোরেজ চান, তাদের জন্য টেরাবক্স-ই হতে পারে বেস্ট সলিউশন। এছাড়াও এর মোবাইল অ্যাপ রয়েছে, যার ফলে মোবাইল দিয়ে খুব সহজেই আপনার ফাইলগুলো আপলোড, শেয়ার ও ম্যানেজ করতে পারবেন। বিনামূল্যে টেরাবক্স থেকে ১০২৪ গিগাবাইট বা ১ টেরাবাইট স্টোরেজ পেতে এই লিংক https://www.terabox.com থেকে সাইন আপ করুন।
৪. বক্স (Box): আমার পছন্দের লিস্টের চতুর্থ স্থানে যে ফাইল হোস্টিং সেবা প্রদানকারী ওয়েবসাইটটি আছে সেটি হলো “বক্স”। বক্স ১০ গিগাবাইট পর্যন্ত ফ্রি স্টোরেজ দিয়ে থাকে। আপনার যদি আরও বেশি স্টোরেজ এর দরকার হয় তাহলে তাদের প্রিমিয়াম প্লানে আপগ্রেড করে নিতে পরেন। এটি আমি আমার পছন্দের লিস্টের একদম চতুর্থ স্থানে রেখেছি তার কারণ হলো এটিতে ফাইল ডাউনলোড করার সময় অতিরিক্ত কোনো বিজ্ঞাপন শো করে না এবং এর ডাউনলোড স্পিডও অনেক ভালো। যার কারণে ইউজাররা খুব সহজেই ফাইল ডাউনলোড করতে পারে, একদম প্রফেশনালদের মতো। এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটার ফাইল এক্সপায়ার হয় না। অর্থাৎ আপনি কোনো ফাইল আপলোড করে রাখলে তা যদি কখোনো ডাউনলোড করা না হয়, তাহলেও সেই ফাইলগুলো ডিলিট হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে আপনার বক্স একাউন্টটি সচল রাখতে হলে প্রতি ৩০-৯০ দিনে মিনিমাম একবার হলেও আপনার বক্স একাউন্টে লগিন করবেন। তা না হলে, আপনার একাউন্টটি ক্লোজ হয়ে যেতে পারে। এছাড়াও এর মোবাইল অ্যাপ রয়েছে, যার ফলে মোবাইল দিয়ে খুব সহজেই আপনার ফাইলগুলো আপলোড, শেয়ার ও ম্যানেজ করতে পারবেন। বিনামূল্যে বক্স থেকে ১০ গিগাবাইট স্টোরেজ পেতে এই লিংক https://account.box.com/signup/personal?tc=annual থেকে সাইন আপ করুন। মিডিয়াফায়ার এবং বক্স বলতে গেলে দুইটাই সেম অর্থাৎ প্রফেশনাল ব্যবহারের জন্য বেস্ট।
৫. গুগল ড্রাইভ (Google Drive): আমার পছন্দের লিস্টের পঞ্চম স্থানে যে ফাইল হোস্টিং সেবা প্রদানকারী ওয়েবসাইটটি আছে সেটি হলো “গুগল ড্রাইভ”। গুগল ড্রাইভ কে চেনে মনে হয় এমন কেউ নেই। বিশেষ করে যারা অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন ব্যবহার করে থাকেন, তাদের কাছে গুগল ড্রাইভ নিত্যদিনের সঙ্গী। তবে গুগল ড্রাইভ-কে বেশি ব্যবহার করা হয় ব্যাকাপ স্টোরেজ হিসেবে অথাৎ ফাইল ব্যাকাপ রাখার জন্য। এবং আমিও মনে করি গুগল ড্রাইভ-কে ব্যাকাপ স্টোরেজ হিসেবেই ব্যবহার করাই ভালো, কারণ এটিকে যদি আপনি ফাইল হোস্টিং ও ফাইল শেয়ারিং এর কাজে ব্যবহার করতে চান ব্যবহার করতে পারবেন কিন্তু গুগল ড্রাইভের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো ব্যান্ডউইথ অর্থাৎ ডাউনলোড লিমিট শেষ হয়ে যায়। যার কারণে কোনো একটি ফাইল বেশিবার ডাউনলোড করে সেই ফাইলটিকে আর ডাউনলোড করতে দেয় না এবং গুগলের কাছে ফাইলটি স্পেসিয়াস মনে হলে হুটহাট করে ফাইলটি রিমুভ করে দেয়, যার ফলে অনেকে বিপাকে পড়ে যান। তবে নিজেদের মধ্যে বা বন্ধুবান্ধবের সাথে টুকটাক ফাইলে শেয়ারিং এর কাজে গুগল ড্রাইভ ব্যবহার করা যেতেই পারে। এছাড়াও এর মোবাইল অ্যাপ রয়েছে, যার ফলে মোবাইল দিয়ে খুব সহজেই আপনার ফাইলগুলো আপলোড, শেয়ার ও ম্যানেজ করতে পারবেন। বিনামূল্যে গুগল ড্রাইভ থেকে ১৫ জিবি স্টোরেজ পেতে এই লিংক https://drive.google.com থেকে আাপনার জিমেইল ব্যবহার করে সাইন ইন করুণ।
বোনাস টিপস: এই ৫টি ফাইল হোস্টিং সেবা প্রদানকারী ওয়েবসাইট ছাড়াও আরো কিছু জনপ্রিয় ওয়েবসাইট আছে যা অনেকেই ব্যবহার করে থাকেন। তবে সেগুলোর স্টোরেজ খুবই কম এবং এতো সুযোগ সুবিধা নেই। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
- মাইক্রোসফট -এর ওয়ান ড্রাইভ। লিংক: https://onedrive.live.com
- ড্রপবক্স। লিংক: https://www.dropbox.com
- পিক্লাউড। লিংক: https://u.pcloud.com/#page=register&invite=eyeP7ZLDDJx7
- আইক্লাউড যা অ্যাপল ইউজাররা বেশি ব্যবহার করে থাকে। লিংক: https://www.icloud.com
এগুলোর মধ্যে থেকে আপনি কোনটি ব্যবহার করেন বা কোনটি আপনার কাছে সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।
তো আজকে এই পর্যন্তই। পরবর্তীতে আবার নতুন কোনো পোস্ট নিয়ে হাজির হবো। ততক্ষণ সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ।

0 মন্তব্যসমূহ